জমি দখল, চাঁদাবাজি আর সন্ত্রাস সৃষ্টি করে এলাকায় নতুন আতংকের নাম কামাল আহমেদ ওরফে পিচ্চি কামাল। পাঁচ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর সরকারি সম্পত্তি দখল করে রাজনৈক কার্যালয় তৈরি করে বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় তৈরি করেছেন সন্তাসের স্বর্গরাজ্য। একসময় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে কাজ করা এই পিচ্চি কামাল এখন ওয়ার্ড বিএনপির নেতা। স্থানীয় সাধারণ মানুষতো দূরে থাক, তার হামলা আর চাঁদাবাজি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না বিএনপির নেতাকর্মীরাও। তার সন্তাসী কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর কাছে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগীরা। এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগের কপি এসেছে বাংলাভিশনের হাতে। সেখান থেকে জানা যায়, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাত নাম্বার ওয়ার্ড কৃষক দলের আহবায়ক মো. ইব্রাহীম হোসেন জানিয়েছেন, এলাকার হাজি রোড ঝিল পার বস্তি সংলগ্ন একটি গার্ড রুমকে কেন্দ্র করে বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি কামাল ওরফে পিচ্চি কামাল দখলে নেয়ার চেষ্টা করে। বিষয়টি দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী হওয়ায় বাধা দিতে গেলে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্তাসী নিয়ে তাকে মারধর করা হয়। মিরপুর থানা কৃষক দলের আহবায়ক মো. সহিদ, সদস্য সচিব এমডি সাজু মিয়া এবং ৭ নাম্বার ওয়ার্ড কৃষক দলের আহবায়ক মো. ইব্রাহীম হোসেন স্বাক্ষরিত সেই আবেদনে প্রতিকার চাওয়া হলেও কামাল আহমেদ ওরফে পিচ্চি কামালের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিএনপির হাই কমান্ড। শুধু স্থানীয় কৃষক দলের আহবায়কই নন, কামাল আহমেদ ওরফে পিচ্চি কামালের বিরুদ্ধে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিবের কাছে আরেকটি অভিযোগ দিয়েছেন ৭ নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মো. লাখপতি মিয়া এবং শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আবু তাহের। সেই অভিযোগ পত্রে উক্ত ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. শামিম এবং সাধারণ সম্পাদক মিরাজ ভূঁইয়ার সিল-স্বাক্ষর দেখা যায়। ঝিলপারের গার্ড রুম দখলে নিয়ে বিএনপির অফিস বানানোর বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল ওরফে পিচ্চি কামাল জানান, স্থানীয় বিএনপির ছেলেপেলেরা এটি বিএনপির অফিস বানিয়েছিলো। পরে সেটিতে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে সেটি আর বিএনপির অফিস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে না বলেও জানান কামাল। কীভাবে সরকারি হাউজিংয়ের জমিতে থাকছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে কামাল বলেন, স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে তিনি গত ২০বছর ধরে সরকারি জমিতে থাকছেন। সরকারিভাবে বরাদ্দ না পেলেও বরাদ্দ পেতে তিনি আবেদন করেছেন বলেও উল্লেখ করেন কামাল। নিজেকে বিএনপির ত্যাগী কর্মী দাবি করে, তিনি বলেন, মিরপুরে বিএনপি করার দায়ে গত ১৫বছর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি।
ঝিলপার বস্তির বাসিন্দা, লাবনী অভিযোগ করেন, গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেও ৫তারিখের অভ্যুত্থান এর পর ২লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন স্থানীয় সন্ত্রাসী মাসুম, সনেট এবং শাকিল। তারা ওয়ার্ড বিএনপির একজন নেতার ছত্রছায়ায় এই চাঁদাবাজি করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সেই বিএনপি নেতার নাম জানতে চাইলে, ভয়ে মুখ খোলেননি লাবনী। বলেন, তার বাড়িতে হামলার পর সন্ত্রাসীদের ভয়ে এলাকা ছাড়া তিনি। যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই চাঁদা দাবি করা হয়, তাদের নাম বললে এলাকায় থাকা যাবে না বলে জানান এই প্রতিবেদককে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়ার্ড বিএনপির একাধিক নেতা জানান, কামাল আহমেদ ওরফে পিচ্চি কামালের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন মাসুম, সনেট এবং শাকিল।
পিচ্চি কামালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে এলাকায় স্বস্তি ফিরে আসবে বলেও মনে করেন তারা।