বৈষম্য বিরোধী ছাত্র পরিচয় দিয়ে রাজধানীর মিরপুর-১ এলাকার হযরত শাহ আলী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নার্গিস আক্তারকে অবরুদ্ধ করে এক মাসের সাময়িক পদত্যাগ পত্রে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
স্কুলটিতে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে প্রধান শিক্ষিকা পদে শিক্ষকতা করে আসছেন নার্গিস আক্তার। তিনি অভিযোগ করেন, স্কুলটির সহকারি প্রধান শিক্ষক খলিফা উজির আহমেদ এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় বহিরাগতদের নিয়ে বৃহস্পতিবার স্কুল ছুটির পর নার্গিস আক্তারের পদত্যাগের জন্য অবরুদ্ধ করেন। বহিরাগতরা দুপুর থেকেই স্কুলের গেটে তালা লাগিয়ে নানা ভাবে তাকে হেনস্থা করতে থাকেন বলেও জানান তিনি। একই সঙ্গে পদত্যাগের জন্য জোড়াজুড়ি করতে থাকেন। সে সময় স্কুলের কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলো না। তিনি আরো বলেন, আমি বাধ্য হয়ে বলি, আমার এখানে প্রায় সাত’শ ছাত্রী পড়াশোনা করে। তারা এবং তাদের অভিভাবকরা কেউ আমার পদত্যাগের দাবি তোলেনি। তাহলে কার স্বার্থে আমি পদত্যাগ করবো? এমন প্রশ্ন করলে তারা আমার ওপর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে মিরপুরের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সমন্বয়ক আশিকুর রহমানকে ফোন করে আমি স্কুলে আসতে বলে। আশিকুর রহমান তার সহযোগিদের নিয়ে স্কুলে আসলে দেখতে পান, স্কুলের গেট ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে যারা আমাকে পদত্যাগের জন্য হুমকি দিচ্ছেন, তারা কেউ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত নন। দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা বহিরাগত উশৃঙ্খল এসব সন্ত্রাসীকে নিবৃত করার চেষ্টা করেন তারা। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে আসা বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা বিকেল ৫টার দিকে স্কুল ত্যাগ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আশিকুর রহমান চলে যাবার কিছুক্ষণ পরেই আবার সেই বহিরাগত সন্ত্রাসীরা স্কুলে প্রবেশ করে নার্গিস আক্তারকে অবরুদ্ধ করে এবং তাদের হাতে লেখা পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। যেখানে লেখা ছিলো, এক মাসের জন্য সাময়িক পদত্যাগ করছি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মিরপুর এলাকার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টিম লিডার আশিকুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, শাহ আলী গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন স্থানীয় কিছু যুবক। তাদের সাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রধান শিক্ষককে নাজেহাল করা থেকে বিরত রাখতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওদের তুলনায় আমরা ছিলাম সংখ্যায় কম। যেসব দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা বলে প্রধান শিক্ষককে হেনস্থা করা হয়েছে, সেটি বৈষম্য বিরোধী ছাত্রেদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না বলেও জানান তিনি। যে স্কুলে সাত শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে, সেখানে ঘটনার সময় ৫০ জন শিক্ষার্থীও উপস্থিত ছিলো না বলেও যোগ করেন আশিক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বিএনপি নেতা বলেন, প্রধান শিক্ষিকা এক পর্যায়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি বহিরাগত সন্ত্রাসীদের কারনে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের সকল প্রতিষ্ঠান অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়বে বলেও মন্তব্য করেন এই বিএনপি নেতা।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সহকারী প্রধান শিক্ষক খলিফা উজির আহমেদ এর সাথে। তিনি বলেন, তার রুমে গত তিন মাস ধরে পত্রিকা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে প্রধান শিক্ষক নার্গিস আক্তার। এছাড়া, সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে হেড মাস্টারের কাছে একটি স্মার্ট ফোন চেয়ে আসলেও তিনি সেটি কিনে দিচ্ছেন না। অন্য কোনো শিক্ষক বা অভিভাবক নার্গিস আক্তারের পদত্যাগ না চাইলেও তিনি কেন বহিরাগতদের নিয়ে হেনস্তা করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে খলিফা উজির আহমেদ জানান, স্কুলের সব শিক্ষক আর অভিভাবক হেড টিচার নার্গিসের চামচা।