বৃদ্ধাশ্রম বলতে আমরা যা বুঝি, সে ধারনা মোটেও ঠিক নয়। পাশ্চাত্য দেশগুলোতে 𝗨𝗹𝘁𝗿𝗮𝗺𝗼𝗱𝗲𝗿𝗻 𝗙𝗮𝗰𝗶𝗹𝗶𝘁𝗶𝗲𝘀 সম্পন্ন বৃদ্ধাশ্রমকে জীবনের শেষ মুহুর্তে নিরাপদ আবাসস্থল (𝗦𝗮𝗳𝗲 𝗛𝗼𝗺𝗲) হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে!
আর আমাদের দেশে বৃদ্ধাশ্রম হচ্ছে অসহায়, অবহেলিত বয়োঃবৃদ্ধদের আবাসস্থল! আমাদের সমাজে বৃদ্ধাশ্রম এক ঘৃনিত শব্দ! অভিশপ্ত, বিবেকহীন সন্তানেরা তার বাবা-মাকে পরিবারের বোঝা মনে করে বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে আসে।
শুধু তাই নয়, অনেক পরিবার রয়েছে যাদের বাসগৃহই এক একটি বৃদ্ধাশ্রম! যেখানে চরম অবহেলায় আর অযত্নে পড়ে আছে বয়োঃবৃদ্ধ মা-বাবা! সেকেলে মা-বাবা প্রাণপ্রিয় সন্তানের আধুনিকতার কাছে হার মেনে যান! সন্তানের কঠিন বাস্তবতার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন না!!
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! একজন মানুষ সারাটা জীবন আত্মা নিঃসৃত ভালোবাসা দিয়ে যে মায়ার বন্ধন তৈরি করে, জীবন সায়াহ্নে স্বার্থান্বেষীচক্রের স্বার্থের টানে তা ছিঁড়ে যায় নিমিষেই!
বৃদ্ধ বয়সে একাকীত্ব, বুকের চাপা কষ্ট আর অসহায়ত্বের সুযোগ নেয় পরম আত্মীয় নামধারী কুচক্রী মহল!
যদিও বৃদ্ধাশ্রম মানবিক মুল্যবোধের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। তথাপিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমাজের সুউচ্চ শিখরের মানুষের মা-বাবাই আমাদের দেশের বৃদ্ধাশ্রমের মুল স্টেকহোল্ডার! পত্রিকায় প্রায়শঃই দেখা যায় খ্যাতিমান চিকিৎসক, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, প্রকৌশলীসহ বিদেশে উন্নত জীবনযাপনে অভ্যস্ত অনেক উচু পর্যায়ের ব্যক্তিদের বাবা-মা’র ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম! প্রত্যেক বাবা-মা নিজের যৌবনের সেরা সময়গুলো বিসর্জন দিয়ে বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে তার সন্তানদের লালন করেন!
একদিন ভালবাসার পরম মমতায় জড়িয়ে যে সন্তান আলোর মুখ দেখেছে সে সন্তানই অন্ধকারে ছুড়ে মারে তার আপনজনকে!
নীল কষ্টের অমাবশ্যার কালমেঘে ঢাকা পড়ে সোনালি স্বপ্নগুলো! হৃদয় ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়! এক চিলতে সময়ের ব্যবধানে তা ভেসে ওঠে অসহায়ত্বের বোবা কান্নায়!!
বিষাক্ত সভ্যতার বিষাদে রূপান্তরিত হয় দীর্ঘশ্বাস! সন্তানের উচ্চ বিলাসী বিকৃত রুচি আর অনুভূতির নির্মমতার আবহে নিঃশেষ হয় সবকিছু!
এটাই হতো নিয়তির নির্মম বাস্তবতা!!
আসুন আমরা নিজেদের পাল্টাই! আর আমাদের এ-ই দৃষ্টিভঙ্গিই সমাজ ব্যবস্থাকে পাল্টে দিতে বাধ্য।
সমন্বিত প্রচেষ্টায় মানবিকবোধ সম্পন্ন সমাজ বিনির্মানে কার্যকরী ভুমিকা রাখতে পারে।
লেখক : আনোয়ারুল ইসলাম রাশেদ