বোরো ধানের বীজের দাম উৎপাদন খরচের চেয়ে কম নির্ধারণ করায় চুয়াডাঙ্গায় ধান বীজ সরবরাহ বন্ধ রেখেছেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চুক্তিবদ্ধ কৃষকরা। এতে পুরো জেলার তিনটি বীজ সংগ্রহ অফিসে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় শতাধিক শ্রমিক হয়ে পড়েছেন কর্মহীন। ধান বীজ সংগ্রহ কর্মসূচি মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চুয়াডাঙ্গায় চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন বোরো ধান বীজ সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল বিএডিসি। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের আওতায় জেলায় ‘কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স’, ‘অধিক বীজ’ ও ‘বীজের আপদকালীন মজুত কর্মসূচি’ অফিস চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের মাধ্যমে ধান বীজ সংগ্রহ করে।
বীজ সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ কমিটি গত ১৯ জুন প্রতি কেজি বোরো ধান বীজের দাম ৪৮-৪৯ টাকা নির্ধারণ করে। এ মৌসুমে কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স কর্মসূচিতে ৩ হাজার ৬০৫ মেট্রিক টন, অধিক বীজ কর্মসূচিতে ২ হাজার ৪৯৫ মেট্রিক টন এবং আপদকালীন মজুত কর্মসূচিতে ১ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন ধান বীজ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
তবে নির্ধারিত দামে লোকসান গুনতে হবে-এই আশঙ্কায় চুক্তিবদ্ধ কৃষকরা বীজ সরবরাহ বন্ধ রেখেছেন। এতে মুখ থুবড়ে পড়েছে বীজ সংগ্রহ কার্যক্রম। সময়মতো সংগ্রহ না হলে দেশের বিভিন্ন জেলায় বোরো মৌসুমে বীজ সংকটে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
এরই মধ্যে অনেক এলাকায় টানা বৃষ্টির কারণে কৃষি জমি প্লাবিত হচ্ছে। অন্যদিকে, বীজ সরবরাহ বন্ধ থাকায় তিনটি অফিস এলাকায় নেমে এসেছে শুনশান নিরবতা। ১০ দিন ধরে বীজ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তালাবদ্ধ রয়েছে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো। প্রায় শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
কৃষকরা বিএডিসির নির্ধারিত জাতের বেশ কয়েকটি ধান চাষ করে সেই ধান থেকে বীজ তৈরি করেন। এরপর তা বিএডিসিতে সরবরাহ করেন। তারা বলেন, এক মণ ধান থেকে বীজে রূপান্তরের সময় আর্দ্রতা, প্রক্রিয়াজনিত ক্ষতি ও ধুলা-চিটা বাদ দিলে তা দাঁড়ায় প্রায় ৩২ কেজি। প্রতি কেজি ধান বীজ প্রস্তুতে খরচ হয় ২ টাকার বেশি। সব মিলিয়ে কৃষকদের প্রতি কেজি বীজ উৎপাদনে খরচ পড়ে প্রায় ৫৩ টাকা। ৪৮-৪৯ টাকায় সরবরাহ করলে লোকসান গুণতে হবে। অন্যদিকে, বাজারে এখন ধানের মণপ্রতি দাম ১৫০০-১৬০০ টাকা।’
শুরুতে কিছুদিন বীজ সরবরাহ করলেও মূলত দাম জানার পর থেকে সরবরাহ বন্ধ রেখেছেন কৃষকরা। ন্যায্য মূল্য না পাওয়া পর্যন্ত কৃষকরা বীজ সরবরাহ বন্ধ রাখবেন বলে জানিয়েছেন। তারা বলেন, ‘উৎপাদন খরচ মেটাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছি। আমাদের দাবি, প্রতি কেজিতে অন্তত ৩–৪ টাকা দাম বাড়াতে হবে।বীজের দাম বাড়ানো হলেই লোকসান কমানো সম্ভব।’
আর শ্রমিকরা জানান, ‘তিনটি অফিসে শতাধিক শ্রমিক কাজ করি। বীজ সরবরাহ বন্ধ থাকায় আমরা কর্মহীন হয়ে পড়েছি। পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহায় অবস্থায় আছি। সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
চুয়াডাঙ্গা বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক এ এফ এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বীজ সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু দাম নির্ধারণের পর কৃষকরা সরবরাহ বন্ধ রেখেছে বলে শুনেছি। আমাদের এখান থেকে কিছু করার নেই, বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।
