চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
হিমাগারে মজুত করা আলু এখন যেন তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খুচরা বাজারে যেখানে আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি মাত্র ১৬ থেকে ২০ টাকায়,
সেখানে গত বছর একই সময়ে দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
মৌসুমের শেষভাগেও দাম না বাড়ায় হতাশ কৃষকরা—
আর হিমাগার মালিকরাও পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
কৃষকদের হিসাবে, মাঠে আলু উৎপাদন থেকে হিমাগারে তোলা পর্যন্ত
প্রতি কেজিতে খরচ পড়ছে প্রায় ২৫ থেকে ২৮ টাকা।
কিন্তু এখন সেই আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮ থেকে সাড়ে ৮ টাকায়—
ফলে লোকসানের হিসাব যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে।
উপজেলার মার্শাল অ্যান্ড মমতা কোল্ড স্টোরেজ
এবং মার্চেন্ডাইজ কোল্ড স্টোরেজ ঘুরে দেখা গেছে—
ফাঁকা শেড, স্তব্ধ পরিবেশ, আর কর্মব্যস্ততা প্রায় নেই বললেই চলে।
প্রতিটি হিমাগারের ধারণক্ষমতা দুই লাখ বস্তা হলেও
এখনও পড়ে আছে দেড় লক্ষাধিকেরও বেশি বস্তা আলু।
হিমাগার ম্যানেজার জিয়াউর রহমান জানান,
“গত বছর দাম ভালো থাকায় এ বছর বেশি চাষ হয়েছিল।
কিন্তু দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা আলু তুলতে আসছেন না।
শেষ পর্যন্ত হয়তো হিমাগার খালি করতে আলুগুলো ফেলে দিতেই হবে।”
কৃষক শরীফের আক্ষেপ—
“এক কেজি আলু তুলতে আমার খরচ ৩০ টাকা,
কিন্তু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮ টাকায়। কীভাবে টিকবো?”
বাজারের ব্যবসায়ী আলা উদ্দিন খানও একই সুরে বললেন—
“২০ হাজার বস্তা আলু আটকে আছে হিমাগারে,
দাম না থাকায় বিক্রি করতে পারছি না।”
এদিকে হিমাগার মালিকদের আশঙ্কা,
নভেম্বরের শুরুতে নতুন আলুর চাষ শুরু হলে
দুই মাসের মধ্যে নতুন আলু বাজারে চলে আসবে।
তখন পুরোনো আলু বিক্রিই হয়ে উঠবে আরও কঠিন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চৈতন্য পাল জানিয়েছেন,
এ বছর আলুর চাষ বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক বেশি।
তবে দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতির মুখে।
তাই এখন থেকেই পরিকল্পিত চাষাবাদের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
চাঁদপুরের মতলবের এই হিমাগারগুলোতে
যেখানে আলু ছিল স্বপ্নের ফসল—
আজ তা যেন পরিণত হয়েছে লোকসানের প্রতীকে।